আরেহ্! বাহ্!! কি সুন্দর প্রশ্ন!!! এই প্রশ্নটাই মনে মনে খুঁজছিলাম! এইতো সেদিন চমক হাসান স্যারের[1] একটা ভিডিও দেখে জানতে পারলাম ১০০ না ২০০ না ৩০০ না বৃত্ত কেন ৩৬০ ডিগ্রিই!
চলুন তাহলে আমার সম্প্রতি শেখা জ্ঞানটা আপনাদের সাথে একবার কপচিয়ে নিই!
বৃত্ত ৩৬০ ডিগ্রি হওয়ার দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে। এর সাথে আবার ব্যাবিলিয়নের[2] (ব্যাবিলন ছিল মেসোপটেমিয়ার একটি শহর। এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যাবে ইরাকের বাবিল প্রদেশে। ব্যাবিলন বাগদাদের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার (৫৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।) একটা সম্পর্ক আছে। দুটি ব্যাখ্যার মধ্যে প্রথম ব্যাখ্যাটি বেশ ইন্টারেস্টিং! কেন ইন্টারেস্টিং? কারণ এর সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটা সম্পর্ক আছে!
আমরা তো সবাই MONTH শব্দটা জানি! MONTH মানে মাস! এই MONTH এর MON এর সাথে আবার MOON এর একটা সম্পর্ক আছে। MONTH আর MOON দুইটার ROOT একই। এছাড়া MONDAY বলে একটা ব্যাপার আছে। MONDAY-র বাংলা সোমবার। সবাই জানি! কাকতালীয়ভাবে সোমবার-এর সোম মানেও চাঁদ! সর্বোপরি, MONTH এর সাথে MOON এর একটা সম্পর্ক আছে! ব্যাবলিয়নিরা খেয়াল করেছিল যে চাঁদ একটা দশা থেকে আবার সেই একই দশায় ফিরে আসতে মোটামুটি (চিকনাচিকনি-ভাবেও হতেও পারে!) ৩০ দিনের মতো লাগে। একই দশা বলতে বুঝাতে চাইছি, একটা পূর্ণিমা থেকে আরেকটা পূর্ণিমায় ফিরে আসতে ৩০ দিন লাগে। তারা এই ৩০ দিনকে একমাস ধরে নিয়েছিল। এখন আমরা জানি যে এটা আসলে এক্সাক্টলি ৩০ দিন না। আবার তারা এটাও লক্ষ্য করেছিল যে একটা ঋতু পরিবর্তন হয়ে আবার সেই ঋতু-তে ফিরে আসতে ১২ মাসের মতো লাগে। তারা তো জানতো যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে। তাই তারা ধরে নিয়েছিল সূর্য পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ১২ মাস সময় নেয়। তাদের কাছে, এক মাস মানে ছিল ৩০ দিন। আর একবছর ছিল ১২X৩০=৩৬০ দিনে। এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্যালেন্ডার ছিল ৩৬০ দিনে।
এখন একটু চিন্তা করুন, সূর্য পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ (তাদের মতে) করা মানে কোনো একটা বিন্দু থেকে শুরু করে আবার সেই স্থানে ফিরে আসতে ৩৬০ দিন লাগে এবং অবশ্যই সূর্যের প্রদক্ষিণ পথ বৃত্তাকার। সূর্যের এই প্রদক্ষিণ-কে একটা চক্রের বা বৃত্তের সাথে তুলনা করুন!
সূর্যের প্রদক্ষিণ পথে সৃষ্ট বৃত্তকে যদি ৩৬০ ভাগে ভাগ করেন তাহলে একেকটা দিন পেয়ে যাবেন! বৃত্তের একেকটা দিনের ভাগকে এক ডিগ্রি হিসেবেও কল্পনা করা যায়। এটা বৃত্ত ৩৬০ ডিগ্রি হওয়ার একটা ব্যাখ্যা!
এবার আরেকটা বলা যাক!
আমাদের সংখ্যা ব্যবস্থা যেমন ১০ ভিত্তিক তেমনি ব্যাবিলিয়নদের সংখ্যা ব্যবস্থা ছিল ৬০ ভিত্তিক। তারা ৬০ভিত্তিক সংখ্যা নিয়ে চিন্তা করতো। ৬০ ভিত্তিক কেন?? ৬০ কে সহজেই ১,২,৩,৪,৫,৬ দিয়ে সহজেই ভাগ করা যায়। এটা একটা কারণ হতে পারে! তারা লক্ষ্য করেছিল যে একটা কোণ বা অ্যাঙ্গেল থেকে সহজে যে ক্ষেত্রটা পাওয়া যায় সেটা হলো একটা ত্রিকোণ বা ত্রিভূজ। এবং মজার ব্যাপার হলো তারা ত্রিভূজটাকে আমাদের এখনকার সমবাহু ত্রিভূজ (এখনকার বলছি কারণ তখন তো আর সমবাহু ধারণা আবিষ্কার হয়নি!) হিসেবে কল্পনা করে প্রতিটি কোণ-কে ৬০ ডিগ্রি ধরে নিয়েছিল।
৬০ ডিগ্রিই কেন?? ওই যে ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থা! এবং তারা আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলো যে ৬টা ত্রিভূজকে একসাথে জুড়ে দিলে একটা চক্র পাওয়া যাচ্ছে!
ঠিক এইভাবে!
যেহেতু ত্রিভুজের প্রত্যেকটা কোণ ৬০ ডিগ্রি, তাই ৬টা ত্রিভূজের ৬টা কোণ মিলে বৃত্তের কেন্দ্রে ৬০X৬=৩৬০ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন করে! এবং আবারো বৃত্ত! কী মজা!
এই ছিল বৃত্ত ১০০ না ২০০ না ৩০০ না ৩৬০ ডিগ্রি হওয়ার গূঢ় রহস্য!
.
.
থ্যাংকু!