কিন্তু কন্টেন্ট মার্কেটিং আসলে কি জিনিষ?
এই টিউটোরিয়ালে আমরা সেটাই আলোচনা করব। আমরা প্রথমে দেখব কন্টেন্ট মার্কেটিং এর সংজ্ঞা কি, এবং এটা কিভাবে করা যায়।
এরপর আমরা দেখবো কন্টেন্ট মার্কেটিং এর অসুবিধা কি ও কিভাবে এটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়।
আসুন দেখে নেই কন্টেন্ট মার্কেটিং এর সংজ্ঞা কি।
Marketing that tries to attract customers by distributing informational content potentially useful to the target audience, rather than by advertising products and services in the traditional way.
এটা অভিধানের সংজ্ঞা। কাস্টমার এট্রাকশন কি এটা সবাই জানে, কিন্তু ইনফরমেশনাল কন্টেন্ট কি? অডিও, ভিডিও, আর্টিকেল এসব অনেককিছুই ইনফরমেশনাল কন্টেন্ট হতে পারে। কিন্তু সেসবই টার্গেট কাস্টমারের জন্য ইউজফুল হতে হবে।
বেসিক আইডিয়া হচ্ছে, টার্গেট মার্কেটে ইউজফুল ইনফরমেশন ফ্রি দিয়ে, তাদের থেকে কাস্টমার তৈরি করা। যদি তাদের আপনার ইনফরমেশন ভালো লাগে, তাদের আপনার প্রডাক্টও ভালো লাগতে পারে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে ভিন্ন। একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। মনে করেন আপনি একটা ওয়েবসাইট ডিজাইন স্টুডিও চালান। আপনার জন্য মার্কেটিং এপ্রোচ গুলা হবেঃ
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং
ম্যাগাজিন, নিউজপেপারে এড, সার্চ ইঞ্জিনে এড ইত্যাদি।
স্যাম্পল এড এমন হতে পারেঃ
Looking for a fresh website design for a great price? Try ABC Design Studio! For a limited time only, get 10% off all design work.
আশা করি একটা বেসিক আইডিয়া পেয়েছেন। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং হচ্ছে কাস্টমারকে ব্যবসার পরিচয় দিয়ে তাদের ক্লায়েন্ট হতে কনভিন্স করা। এটা ডায়রেক্ট, ও এতে ইমিডিয়েট সেলস বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এটা বেশিদিন কার্যকর থাকে না।
কন্টেন্ট মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং একটু অন্যরকম। এটা লংটার্ম মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। এখানে কাস্টমার আপনার কাছে পাওয়া তথ্য থেকে বুঝতে পারবে আপনার সার্ভিসের কোয়ালিটি, ফলে সে আপনার কাস্টমার হতে আগ্রহী হবে। কন্টেন্ট মার্কেটিং এর একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ইমেইল নিউজলেটার।
সাইনাপের পরে রিডারদের কাস্টমারে রুপান্তর করার অনেক সুযোগ থাকে। সেই নিউজলেটারে ৮০% থাকে ফ্রি ইনফরমেশন, আর ২০% থাকে সেলফ প্রোমোশন।
এছাড়াও অনেক কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি আছে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং তাই একটি ইনডায়রেক্ট এপ্রোচ। সরাসরি কারো থেকে টাকা না চেয়ে, বরং এখানে ট্রাস্ট বিল্ডিং এর উপর মনোযোগ বেশি দেয়া হয়। ফলে, লং টার্মে সুদূরপ্রসারী ফলাফল পাওয়া যায়।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এ কি নতুন?
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং তুলনামূলকভাবে সহজ। সে তুলনায় কন্টেন্ট মার্কেটিং এত সোজাসাপ্টা নয়।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কন্টেন্ট মার্কেটিং ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে বেশি কার্যকর। এর বিস্তারিত আমরা পরবর্তী সেকশনে দেখব।
২. কেন কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্যবহার করবেন
আমরা দেখলাম কন্টেন্ট মার্কেটিং একটি ইনডায়রেক্ট এপ্রোচ। তাহলে কেন আমরা এটা ব্যবহার করব। কেন এই কাজে সময় নষ্ট করতে রাজি হব? এই সেকশনে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করব।
মানুষ এডভার্টাইজ পছন্দ করে না
মানুষ দিন দিন এড ব্লকিং সফটওয়্যার ব্যবহার বাড়িতে দিচ্ছে। যারা এড ব্লক করেও না, তারাও এডে আজকাল আর ক্লিক করে না।
এগুলো ছিলো অনলাইন এডসের রিপোর্ট, কিন্তু টিভির এডের অবস্থাও বেশি ভালো না। আজকাল, মানুষ টিভির এডও দেখে না। সবাই ইউজফুল ইনফরমেশন পেতে বেশি আগ্রহী।
লয়েল ফ্যানরাই এডভার্টাইজিং এর কাজ করে
আপনার কন্টেন্ট যদি অন্যরা ইউজফুল মনে করে, তারাই সেটা অন্যদের মাঝে শেয়ার করে বিলিয়ে দেয়। এটা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে বেশি কার্যকর।
যদি আপনার কন্টেন্ট কমও শেয়ার হয়, সেটা নিয়ে নতুন কাস্টমার পেতে সুবিধা হয়। কেন? কারণ মানুষ আপনার কন্টেন্ট শেয়ার করছে এর মানে হচ্ছে আপনার ব্যবসার উপর তাদের ট্রাস্ট আছে। এর ফলে তারা আপনারকে নতুন কাস্টমার খুঁজে পেতে সহায়তা করছে।
মানুষ ফ্রি জিনিষ পছন্দ করে
ফ্রি কিছু পেতে কে না ভালোবাসে?
অনলাইনেও সেটা সত্য। ইন্টারনেট তৈরিই হয়েছিল ইনফরমেশন ফ্রি ডিস্ট্রিবিউট করার জন্য। আজকাল যখন সবার সব জিনিষ কিনে ব্যবহার করতে হয়, সেখানে বেসিক ফ্রি জিনিষ সবাই ভালোবাসে।
এতে করে মানুষের সাথে আপনার ব্যবসার একটা রিলেশন তৈরি হচ্ছে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং সাশ্রয়ী
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য অনেক কম বিনিয়োগ করতে হয়। বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রি তে ব্যবহার করেই এই কাজ করা যায়। ( এর কিন্তু ডিসেডভান্টেজও আছে, যা আমরা পড়ে দেখবো )
কিছু কেনার আগে মানুষ যেভাবে চিন্তা করে
আজকাল মানুষ হুট করে কিছু কেনে না। তারা এই ব্যাপারে অনলাইনে সার্চ করে। অন্যদের রিভিউ চায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই হুট করে একজন এড দেখে আপনার প্রোডাক্ট কিনে ফেলবে, এমন আর হয়না। তাই কমিউনিটির সাথে আপনার যোগাযোগ করতে হবে।
প্রোফাইল বিল্ডিং
অনেক মানুষ যারা আপনার পোস্ট বা ভিডিও দেখবে, তারা আপনার থেকে কিছু কিনবে না। কিন্তু, এই শ্রম ফেলনা যাবে না। আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষ জানবে। আর এত মানুষ আপনার সাইটে ভিজিট করায় আপনার সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিংও বাড়বে।
লং টার্ম সাস্টেইনেবিলিটি
যখন এড কেনেন, তখন অনেক মানুষ আপনার সাইটে আসে, কাস্টমার কিছু কেনে। কিন্তু যখন আর এড শো করবেন না, তখন এরা কেউ আর সাইটে ভিজিট করবেনা। আবার টাকা দিয়ে এড কিনতে হবে, আবার সব শুরু থেকে স্টার্ট হবে।
একটা পপুলার পোস্ট বছরের পর বছর মানুষের কাছে জনপ্রিয় থাকতে পারে। এমনকি ৫ বছর পরেও সেটার জন্য আপনার সাইটে হাজার হাজার নতুন মানুষ ভিজিট করবে।
কন্টেন্ট যত ভালো হবে, ট্রাফিকও তত বেশি পাবেন। আর এতে খরচ মাত্র একবারই হচ্ছে।
৩. কন্টেন্ট মার্কেটিং এর প্রতিবন্ধকতা
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা। কিন্তু এর কিছু অসুবিধাও আছে।
অন্য সবাই একই কাজ করছে
কন্টেন্ট মার্কেটিং বেঞ্চমার্ক জরিপ অনুসারে ৮৬% বিজনেস কন্টেন্ট মার্কেটিং করে। এর মানে হচ্ছে মার্কেটে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।
আপনার ইন্ডাস্ট্রি যেটাই হোকনা কেন, দেখা যাবে আপনার হাজারো কম্পিটিটর আগে থেকি কন্টেন্ট মার্কেটিং শুরু করে দিয়েছে। আধুনিক সময় এটাকে বলা হয় ইনফরমেশন ওভারলোড। এই কারণে ঠিকমত অডিয়েন্স পেতে সমস্যা হয়। তাই অডিয়েন্স পেতে ভোগান্তি হয়।
শ্রম ও সময় লাগে
কন্টেন্ট মার্কেটিং লো কস্ট। কিন্তু টাকার পরিবর্তে অনেক বেশি সময় লাগে এই কাজে।
কন্টেন্ট তৈরি করতে অনেক রিসার্চ করা লাগে, লেখা, কম্পোজ, এডিট করতে অনেক সময় দরকার হয়। আর এমনও হতে পারে, এরপর অনেক লম্বা সময়ে আপনি কোন রিটার্ন পাবেন না।
কাউকে এই কাজের জন্য কর্মচারি রাখতে পারেন, কিন্তু সেটায় খরচ বেশি। আর কাকে জবে রাখবেন, সেটাও দেখার বিষয়। অথেনটিসিটি ও রিলায়াবিলিটি মেইনমেইন না করলে মার্কেটিং এর হিতে বিপরীত হবে।
সাকসেস রেট মাপা কঠিন
সবকিছু ঠিক মত হচ্ছে কিনা কিভাবে বুঝবেন? ট্রাফিট ইনক্রিস হয়েছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বেড়েছে? ইমেইল লিস্ট বড় হয়েছে? নাকি দেখবেন আসলে কয়জন নতুন কাস্টমার আপনার সার্ভিস কিনেছে?
ধরেন, সবাই আপনার কন্টেন্ট সম্পর্কে পজিটিভ রিভিউ দিচ্ছে, কিন্তু মাপার মত সিগনিফিকেন্ট কোন রেজাল্ট পাচ্ছেন না। সেটা কি এনাফ?
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর কিছু জিনিষ ঠিকমত ট্র্যাক করা যায়না।
কিভাবে এই সাকসেস ট্র্যাক করা যায়, তা নিয়ে ভবিষ্যতে একটি টিউটোরিয়াল লিখবো এই সিরিজে।
৪. কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি
আমরা দেখলাম কন্টেন্ট মার্কেটিং কি, এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো।
তো, কোন স্ট্র্যাটেজি ফলো করলে কন্টেন্ট মার্কেটিং এ সাকসেসফুল হবেন?
চ্যানেল সিলেক্ট করুন
যেমন আগেই বলেছি, কন্টেন্ট মার্কেটিং করার উপায় অনেক। নিচে কয়েকটি উপায়ের লিস্ট দেয়া হলঃ
- ব্লগিং
- অডিও পডকাস্ট
- ইউটিউবে ভিডিও
- সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার
- ইনফোগ্রাফিক
- অন্যান্য পপুলার ব্লগে গেস্ট পোস্ট
- বই বা হোয়াইট পেপার লেখা
- ওয়েবিনার করা
এই লিস্ট থেকে দুই একটি চ্যানেল সিলেক্ট করুন। এরপর সেখানে নিয়মিত প্রেজেন্স রাখুন।
নিজের স্কিলের উপর ভিত্তি করে চ্যানেল সিলেক্ট করুন। আপনি ভালো ভিডিও বানাতে পারেন? তাহলে ইউটিউব। ভালো ব্লগ লিখতে পারেন? তাহলে ব্লগিং করুন।
কন্টেন্ট তৈরির সময় আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের কথা মাথা রাখুন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ
কন্টেন্ট যেন বোরিং না হয়
কর্পোরেট ব্লগিং এর কথা মনে আছে? আগের দিনে এর চেয়ে বোরিং পৃথিবীতে কিছু ছিলো না।
ক্ষুদ্র ব্যবসাও অনেক সময় এই ভুল করে।
নিজেদের ক্রেডিবল দেখানোর আশায়, তারা কর্পোরেট ব্লগের মত বোরিং কন্টেন্ট জেনারেট করে। এই ভুল করবেন না। আপনাকে কেউ বিড়ালের ভিডিও পোস্ট করতে বলছে না। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট যেন অডিয়েন্সের কাছে ইন্টারেস্টিং মনে হয়। তাহলেই তারা সেটা শেয়ার করবে।
সস্তায় সেটেল করতে যাবেন না
নিম্নমানের কন্টেন্ট কেউ পছন্দ করেনা। কন্টেন্ট টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে ভ্যালুয়েবল হতে হবে।
বেশি কন্টেন্ট জেনারেট করতে গিয়ে নিম্নমানের ডেলিভারি দিলে বিজনেস রেপুটেশন নষ্ট হবে। এর চেয়ে কোয়ালিটি মেইনটেইন করুন।
কন্টেন আপনার রেপুটেশনের সাথে যুক্ত। কন্টেট ইনভেস্টমেন্ট হিসাবে গন্য করুন।
কনভার্শন প্ল্যান তৈরি করুন
আপনার কন্টেন্টের ফ্যান আছে। এখন তাদের কাস্টমারে রুপান্তর করবেন কিভাবে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট মার্কেটিং করলে, অডিয়েন্স কে কিভাবে আপনার সাইটে ভিজিট করানো যায় ভাবুন। তাদের জন্য ডেডিকেটেড ল্যান্ডিং পেজ রাখুন। টেমপ্লেট কিনে কিভাবে ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করতে হয় জানতে পড়ুনঃ
এরপর একটা ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রেডি করুন। কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করতে হয়, জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুনঃ
কিভাবে এক পোস্ট পড়ার পর, অন্য পোস্ট পড়তে পাঠক আগ্রহী হবে, ভাবুন। পোস্টে সাইনআন ফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রি বই না শর্ট কোর্স অফার করুন।
ওয়েবসাইট দেখতে যেন প্রফেশনাল হয়, দরকারে এনভাটো থেকে ওয়ার্ডপ্রেস থিম কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এখানে অনেক রকমের ব্যবসার জন্য নানা রকম প্রিমিয়াম থিম কিনতে পাওয়া যায়। অথবা আমাদের সকল বেস্ট সেলিং থিম ব্রাউজ করে দেখুনঃ
পরবর্তী ধাপঃ
আশা করি এই আর্টিকেল কন্টেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে আপনাকে পরিষ্কার ধারনা দিয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা কন্টেন্ট মার্কেটিং এর সুবিধা অসুবিধা গুলাও দেখলাম।
এটা অনেক বড় পরিসরের টপিক। ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে আরো আর্টিকেল লেখা হবে। পরবর্তী আর্টিকেলে আমরা দেখবো ব্যবসার জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্লগিং কিভাবে করতে হয়।